শিরোনাম
অস্ট্রেলিয়া স্টুডেন্ট ভিসা: বাংলাদেশ এখন 'লেভেল ১' *** ​'স্পষ্ট প্রেসক্রিপশন মৌলিক অধিকার': দুর্বোধ্য হস্তাক্ষর নিয়ে ভারতীয় ডাক্তারদের কড়া নির্দেশ আদালতের *** অস্ট্রেলিয়ার বাজারে লু লু হাইপারমার্কেটকে আমন্ত্রণ *** মালয়েশিয়ায় ভুয়া বিয়ে করলে কঠিন শাস্তি: প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা *** হানিয়া আমির আসছেন ঢাকায়: সানসিল্কের আমন্ত্রণে প্রথম বাংলাদেশ সফর ***




↠হাসিবুর রহমান


৬ অক্টোবর, ২০২৫

মতামত › রাজনীতি, বিচার,আইন,বিচারব্যবস্থা, বাংলাদেশ,কোর্ট,

মন্তব্য:০

News Picture

চিত্র:সুপ্রিম কোর্ট| |ক্রেডিট : সিডনি বাংলা নিউজ

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও জরুরি অবস্থা

বিচার ব্যবস্থা একটি দেশের/সমাজের মৌলিক ভিত্তি। মানব জাতি একসাথে থাকা, সমাজ ও দল গঠনের মূল কারণগুলোর একটি হলো একে অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সরকারেরও তিনটি প্রধান অঙ্গের একটি হলো বিচার ব্যবস্থা। কোনো দেশ বা সমাজের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অর্থ হলো, সেই দেশ বা সমাজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাওয়া। ​বিচার ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে: ​একটি দেশ বা জনগোষ্ঠীর সকল জনগণ একই সাথে অপরাধ করা শুরু করলে পৃথিবীর কোনো বিচার ব্যবস্থাই সেই জনগোষ্ঠীর প্রতি কার্যকর নয়। কারণ, দৈবিকভাবে সবার শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেও লোক বাছতে গেলে উজার হওয়ার দশা হবে। তাই বিচার এর মূল উদ্দেশ্য হলো, “অপরাধ করলে শাস্তি হবে”, জনগণের মধ্যে এই ধারণা গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ (Deterrence) করা। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়েও বেশি জরুরি। ​বাংলাদেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা: ​বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত: দেওয়ানি (সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ) ও ফৌজদারী (হত্যা এবং গুরুতর শারীরিক ও মানসিক অপরাধ)। ​দেওয়ানি আদালত: ​বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থার কেন্দ্র হলো নিম্ন আদালত (জেলা ও থানা ভিত্তিক)। সরেজমিনে দেখা যায়, এই বিচার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ আসলে না বিচারক, না উকিলদের হাতে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বিচার চলে উকিলদের চাপরাস/সহায়ক/মুহুরিদের হাত ধরে। আধুনিক পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের উকিলেরা মামলা হিসাবে অর্থ গ্রহণ করেন না। কোর্টের তারিখ হিসাবে টাকা লেনদেন হয়। এই কারণে দেশের আদালত সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মধ্যে সহজ মামলাকেও বছরের পর বছর ঝোলানোর মানসিকতা দেখা যায়। কারণ, যত দেরি, তত 'ডেট', তত অর্থ। অনেক ক্ষেত্রে উকিলেরা জানেনও না, তিনি কোন মক্কেলের মামলা চালাচ্ছেন, কী নিয়ে মামলা; তারিখ মতো আদালতে কাগজ (সহকারী থেকে সংগৃহীত) দিয়ে আরেকটা তারিখ অর্জন করতে পারাকেই এই ধরনের উকিলেরা সাফল্য মনে করে থাকেন। ব্যতিক্রম হয়ত আছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়। বলা যায়, দেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থা এই সকল সহকারীদের কাছে জিম্মি। এই কারণে যে মামলা অতি ২-৩ জন ব্যক্তি এক ঘণ্টায় সমাধান করতে পারে, সেই সমস্যা ২০ – ৩০ বছরেও সমাধান হয় না। ​ফলাফল: পূর্বে বর্ণিত বিচার ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতার অপমৃত্যু। সোজা ভাষায় বললে, দেশের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না যে সাধারণ পরিস্থিতিতে ৫-১০ বছরে তার সমস্যা (বিশেষ করে ভূমি জটিলতা) আদালতে সমাধান হবে। অপরাধীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সে যা অপরাধ করুক, কোনোভাবে সম্পত্তির দখল নিতে সমর্থ হলেই সে নিশ্চিত। সে অপরাধ করলেও ৫-১০ বছরে আর কোনো সমাধান হবে না। যা খুবই বিপন্নক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষেত্রে বিচারকদেরও ভূমিকা আছে, যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হলো। ​ফৌজদারী আদালত: ​এই আদালতের পরিধি অনেক বেশি বিস্তৃত। (নিম্ন, উচ্চ, আপিল, ইত্যাদি)। কিন্তু মোটা দাগে আগের সমস্যার সাথে আরও একটি সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। ​ক। কোনো মানবতা বিরোধী/ভাইরাল মামলা না হলে তো নামেমাত্র শর্তে যেকোনো মামলার জামিন, সাজা হলেও দণ্ডপ্রাপ্তের আগাম মুক্তি। খ। দেওয়ানি আদালতের মতো বিচারকদের মামলা শেষ করায় অনীহা। ​আরও কারণ আছে, যেমন অর্থ ও পেশিশক্তির অবাধ ব্যবহার, জেলখানায় উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ইত্যাদি, কিন্তু এগুলোও উপরোক্ত দুইটি সমস্যার সাথে জড়িত। ​ফলাফল: দেওয়ানি আদালতের মতোই প্রতিরোধ ক্ষমতার অপমৃত্যু। সরল ভাষায়, অপরাধীদের দৃষ্টিতে, “আমি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, যাই করি, বড়জোর যা হবে, কিছুদিন জেলে থাকব, সবকিছু ঠাণ্ডা হয়ে এলে এমনিতেই জামিন হয়ে যাব। বিশেষ করে, এই ধারণা প্রবল হয়েছে যে যখন খুন – খারাবি, অঙ্গহানি করেও মানুষ পার পেয়ে যায়, আমার তুচ্ছ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতনের আর কী বিচার হবে।” যা বর্তমান বাংলাদেশে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। ​মূল কারণ: ​আদালত সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা এবং সরাসরি কর্ম-স্বার্থের অভাব। যেমন, একজন দেওয়ানি বিচারক সারা মাসে একটি মামলাও সমাধান না করলেও তার কেরিয়ার বা বেতনের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। (অন্তত সরেজমিনে)। বা ভাইরাল না হলে ৫০টি মামলা সমাধানেও তেমন কোনো সুপ্রভাব নেই। ​সম্ভাব্য সমাধান: ​১। বিচারকদের বেতন এবং পদোন্নতি তার পারফরম্যান্স (সে কত মামলা সমাধান করল) ভিত্তিক করা উচিত। এই বিষয়ে আরও আলোকপাত করা হবে। ২। জামিন মনিটরিং। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত সরকারি তদন্ত করে পুনর্বিচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামিন দেওয়ার টাকা বাজেয়াপ্ত করতে হবে (অপরাধ ভেদে মোট সম্পত্তির % হারে, যাতে একজন কোটিপতির জামিন যেন ১৫০০ টাকা না হয়), এবং জামিনদার এরও ব্যর্থতার সাজা দিতে হবে। ৩। জনগণের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি। ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ায় আদালতের সরাসরি ডাটা প্রদর্শন। বিচার এর সরাসরি ভিডিও প্রদর্শন, ইত্যাদি। ​(স্থানীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা ও সমাধান এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, কারণ এগুলোর দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়) ​মন্তব্য: ​বিচারকদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে মামলা ভেদে পয়েন্ট দেওয়া যেতে পারে। একটি চার্ট ভিত্তিক পয়েন্ট সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে। সহজ মামলা ১-৩ পয়েন্ট। কঠিন মামলা ৭-১০ পয়েন্ট। এতে করে এক এলাকায় সরকার কোনো বিশেষ অপরাধের(যেমন, ছিনতাই) মান বাড়াতে/কমাতে পারবে। যাতে করে একদিকে এলাকা ভিত্তিক সমস্যার সমাধান বিচারকেরা নিজের স্বার্থেই করবেন; অন্যদিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পয়েন্ট, যা শুধুমাত্র মামলা সমাধান করেই পাওয়া সম্ভব, ছাড়া উকিলদের উচ্চ মানসম্পন্য মামলা পরিচালনায় বিধিনিষেধ আরোপ করে উকিলদের স্বার্থ যুক্ত করতে পারে। পরিশেষে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও সামাজিক নিরাপত্তার (যা মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে), রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদার আহ্বান জানাই।





মন্তব্য